ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালের স্টোররুম সহ বিভিন্ন কক্ষে দুই মাসের মধ্যে তিনবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও প্রতিটি ঘটনা মানবসৃষ্ট ছিলো বলে জেরা প্রশাসনের তদন্তে উঠে এসেছে। বারবার মনবসৃষ্ট এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনা রোধ করা না গেলে যে কোনো সময় বড় ধরনের অঘটনের শংকা প্রশাসন ও রোগী এবং সংশ্লিষ্টদের। যদিও মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অদ্যবদি অগ্নিকান্ডের কারণ তদন্ত করে নিশ্চিত হতে পারেননি।
জচানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এই বিএসএমএমসি হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ৫৪ দিনের ব্যবধানে তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যদিও একটিতেও থানায় কোন জিডি বা মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে বার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
গত ১৬ মে হাসপাতালের স্টোররুমে আগুন লাগে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালটির নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে অবস্থিত ভান্ডার কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।কক্ষটি গ্রিল ও থাই গ্লাস দিয়ে সুরক্ষিত। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিন হাজার ৬০০ বর্গফুটের ওই কক্ষটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। আগুনে ওই কক্ষে থাকা যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র পুড়ে যায়। পরে ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান। তার আগে গত ২২ মার্চ প্রথম দফায় হাসপাতালের মর্গে আগুন লাগে। মর্গে মৃতদেহ ছিল এবং মর্গটির মূল ফটক বাইরে থকে বন্ধ ছিল। কক্ষটিতে কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিলনা। এর ৯দিন পর দ্বিতীয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেহাসপাতালের ৯তলা (নতুনভবন) ভবনের ষষ্ঠ তলায়।
এসব অগ্নিকাণ্ডের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফরিদপুর দমকল বাহিনীর সহকারী পরিচালক।
তদন্তকমিটির অনুসন্ধানে এসব অগ্নিকান্ড মানবসৃষ্ট বলে প্রতিয়মান হয়। একত প্রশ্নের জবাবে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। কেবিনেট বা মন্ত্রণালয় এগুলো যাচাই-বাছাই করে আরো বিশদ তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিম আসবে বলে আশা করছি। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার আরো জানান, বিএসএমএমসি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাট সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এবিষয়টিও আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখানে সেবার মান বৃদ্ধির জন্য, এখানে যারা ডাক্তার আছেন দ্বায়িত্বরত তাদের আচরণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌছানোর জন্য যদি প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয় সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিবে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় (মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান)। আমি স্যারকেও অনুরোধ করবো তিনি যেনো দ্রুত একটি সভা করে এই হাসপাতালে যতো অনিয়ম বা সেবা বঞ্চিতের বিষয় আছে সেগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
আর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তারা এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমার কাছে সময় বৃদ্ধির দাবী জানালে সময় বাড়িয়েছি, প্রতিবেদন পেলে অগ্নিকান্ডের কারণ জানাতে পারবো।
এদিকে এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনেরা জানান, অগ্নিকান্ডের দিনে সরু নিড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নিচে নামতে বেগ পেতে হয় তাদের।
গণতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতির ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি এ্যাড মানিক মজুমদার, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বোয়ালমারী উপজেলা শাখাার সদস্য সচিব গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন মনে করেন, জেলা প্রশাসনের তদন্তে যেহেতু অগ্নিকান্ড মানবসৃষ্ট বলে প্রতিয়মান হয়েছে, সেহেতু কারা এ ঘটনার সাথে জড়িতে তা তদন্ত করে বের করা জরুরী, অন্যথায় বার বার এমন ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাজে আসে তাই এমন দূর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের হতাহতের সম্ভাবনা থাকে। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পূর্বপাশে ১৯৯১সালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে শয্যা বাড়িয়ে ৫০০ তে উন্নীত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর’ নামকরণ করে সরকার। ২০২৩ সালের ১৭ মে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এই হাসপাতালকে পাঁচশ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়। ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও, আশপাশের জেলা তথা- মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ীর গুরুত্বর রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তিও দুটি বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালটিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মূল্যবান এমআরআই মেশিন, সিটিস্ক্যানমেশিন, এন্ডোস্কপি, কোলনোস্কপি, এনজিওগ্রামের মতো মেশিন স্থাপন করা হলেও এসবের অধিকাংশই অকেজো পড়ে আছে। এমন কি সামান্যএক্সরে মেশিনটিও এক্সররিল না থাকার অজুহাতে অধিকাংশ সময় অকেজো করে রাখ াহয়।এতে দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা। #
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন