ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের নগরকান্দায় কবির ভূঁইয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নগরকান্দা থানায় নিহত কবির ভূঁইয়ার স্ত্রী মোনজিলা বেগমের দায়ের করা (৪৪) মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে হয়ে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। যার মামলা নং- ০৮।
যদিও এ হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা নেই দাবী করে শামা ওবায়েদ এক বিবৃতিতে নগরকান্দায় সংঘর্ষ এবং পরবর্তীতে মামলার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
শামা ওবায়েদ বিবৃতিতে যা বলেছেন তা তুলে ধরা হলো :- ‘আমি শামা ওবায়েদ, স্বাধীনতার ঘোষক, সেক্টর কমান্ডার রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে আমার অবস্থান তুলে ধরছি। প্রথমত, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির প্রাক্তন মহাসচিব প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমানের জন্মস্থান এবং আমার শেষ ঠিকানা ফরিদপুরের নগরকান্দায় ২১ আগস্ট ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনায় গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় সাংগঠনিক যে সিদ্ধান্ত গৃহীত তাকে আমি পূর্ণাঙ্গ সমর্থন জানাই। পরবর্তী সময়ে ২৪ আগস্ট আমাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষ এবং পরবর্তী মামলার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই আমি।’
‘দ্বিতীয়ত, গেল ১৮ বছরে গুম, খুন, জেল, জুলুমসহ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমন ধ্বংসযজ্ঞ থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির আন্দোলন এখনও চলমান রয়েছে। গত জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণহত্যাকে উপেক্ষা করে ছাত্রজনতা ও গণতন্ত্রকামী সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রবল প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। যার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করে। গঠিত হয় অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে দেশি বিদেশি সবার সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত আছে।’
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘যে রক্তের বিনিময়ে যে অর্জন তা এখনও শুকায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমার জন্মস্থান তথা আমার শেষ ঠিকানা ফরিদপুরের নগরকান্দা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এখনও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের পাশে দাঁড়ানোই এখন আমার এলাকার মানুষের প্রত্যাশা। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিভাজন, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মনোনয়ন বিজয় তোড়ন নির্মাণ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তারে শোডাউন কাম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গেল ২১ আগস্ট ফরিদপুরে সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দলের পক্ষ থেকে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি চালিয়ে যাচ্ছি। ২১ আগস্টের সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনা আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেককেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও নামসহ তথ্য প্রকাশ হয়েছে সংঘর্ষকারীদের পরিচয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনসহ শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য।’
‘তৃতীয়ত, দেশে বিদেশে অবস্থানরত আমার শুভানুধ্যায়ীদের নানা ধরনের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে আমার নিজের অবস্থান তুলে ধরলাম। সবাইকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলার অনুরোধ করছি।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ১/১১ এর অবৈধ সরকারের নির্যাতনের শিকার গুরুতর আহত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের, মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, নির্বাহী কমিটির সদস্যরা, দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংগ্রামরত সকল পেশাজীবী সংগঠনসহ দেশে বিদেশে অবস্থানরত সর্বোপরি বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্ক রক্তের। যেকোনো পরিস্থিতিতে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে দল নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি সচেষ্ট থাকব।’
এদিকে মামলার ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও লস্করদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল তালুকদার বলেন, ঘটনার সময়ে আমি লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সাধারন জনগনের সেবা দিচ্ছিলাম। ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না, তবুও আসামী হয়েছি।
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল জানান , সংঘর্ষের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম নগরকান্দা পোড়াপাড়া যাওয়ার রাস্তায় ছিলাম। কিন্তু কবির ভুঁইয়া নিহত হয়েছে নগরকান্দা ব্রীজের গোড়ায় , ঐ স্থানে আমি ছিলাম না, তবুও আসামী করা হয়েছে। তিনি আরো জানান কবির কৃষক দলের কোন সদস্য না। তিনি তরিকত ফাউন্ডেশনের সদস্য বলে শুনেছি।
সাবেক ছাত্রনেতা মাসুদুর রহমান তৈয়ব জানান , কবির ভুঁইয়া যেস্থানে নিহত হয়েছে আমি ঐ এলাকায় ছিলাম না। আমি পেট্রোল পাম্পে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ।
এদিকে নিহত কবির ভুইয়ার স্ত্রী ও মামলার বাদী মোনজিলা সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে স্বামী হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
আর নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২১ আগস্ট) কৃষক দল নেতা শহীদুল ইসলামের মোটর শোভাযাত্রা যোগে ঢাকা থেকে নগরকান্দা উপজেলায় যাবার পথে নগরকান্দা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে নগরকান্দা পৌরসভার ছাগলদী মহল্লার বাসিন্দা কবির ভূঁইয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার জেরে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে হত্যা মামলায় শামা ওবায়েদকে আসামি করা হয়। #
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন