ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর মেয়র ও এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে করোনা দুর্যোগকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেয়া বিশেষ ওএমএস কার্ড বরাদ্দে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, তালিকায় ও কার্ডে নাম থাকলেও কোন চাল সহায়তা পাননি তারা।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভা করোনার অধিক সংক্রমন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ইতিমধ্যে সেখানে রেডজোন ঘোষনা করে সেখানে লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। আবারো কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলো। সেখানে সরকার প্রধানের দেয়া বিশেষ সহায়তা কার্ডে নাম থাকার পরেও চাল পায়নি অনেক পরিবার।
সম্প্রতী ওএমএস কার্ডের চাল দেয়ার সময় কার্ড একজনের কিন্তু চাল তুলতে অন্য একজন আসলে বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। দেখা যায় পৌর এলাকার কাফুরা সদরদী গ্রামের মিতু আক্তার নামে একজনের কার্ড নিয়ে চাল নিতে আসেন অন্য এক যুবক। অথচ মিতু আক্তার জানেন ই যে তার নামে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
খবর পেয়ে মিতু আক্তারের স্বজন চাল বিতরণের স্থানে উপস্থিত হয়ে ওই কার্ডটি নিয়ে আসে। এসময় স্থানীয়রা এধরনের আরো বেশ কয়েকটি কার্ড জব্দ করে। দেখা গেছে কার্ডটিতে ভাঙ্গা পৌর মেয়র আবু রেজা মো. ফয়েজ এর সীল ও স্বাক্ষর এবং স্থানীয় কাউন্সিলর টুটুল ফকিরের সিল দেয়া রয়েছে। যদিও কাউন্সিলর স্বাক্ষর করার পরে মেয়রের স্বাক্ষর করার নিয়ম, কিন্ত সেখানে কাউন্সিলরের কোন স্বাক্ষরই ছিল না।
মিতু আক্তারের মত একই ঘটনা মো. শওকত মুন্সী, চাদ মিয়া মুন্সী, সোহেল শেখ, অনিক মুন্সী, নাসির মুন্সী, সজিব শেখ, পারুলী বেগম, মো. আজীম মুন্সী, আক্কাস মুন্সীসহ আরো অনেকের অভিযোগ, তালিকায় তাদের নাম রয়েছে, রয়েছে কার্ডও, কিন্তু অদ্যবদি তারা কোন চাল সহায়তা পাননি।
শওকত মুন্সীকে চাল পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, চাল তো পাইইনি, এই কথা ইউএনওসহ কয়েক জায়গায় বলাতে কাউন্সিলর তাকে বকাঝকা করেছেন।
অপরদিকে আমেনা বেগম, সালেহা বেগম ও পলি আক্তার নামে তিনজনের নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়েছে পৌরসভা। কিন্ত তাদের পাশ^বর্তী আলগী ইউনিয়নের বাসিন্দা। খোজ নিয়ে জানা গেছে, এই তিনজনকে পৌর মেয়র কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন।
উল্লেখ, দেশে করোনা দুর্যোগ শুরু হলে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ ওএমএস চালু করা হয়। সেখানে ১০ টা কেজি মূল্যে ৩০’শ টাকার বিনিময়ে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন কার্ড ধারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল মুন্সী জানান, ৯ নং ওয়ার্ডেই আমরা ৩০/৪০ জনকে চিহ্নিত করেছি যারা অন্যের কার্ডে চাল নিচ্ছেন। চিহ্নিত করতে পারেনি আছে আরো অনেক। শুধু মাত্র এই ১টি ওয়ার্ড না, পুরো পৌরসভার সব জায়গাতেই একই ভাবে জালিয়াতি হয়েছে।
পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর টুটুল ফকির জানান, অনেক কার্ডের ভিতর ২/১ টায় ভুল হতে পারে, সেটি সম্পূর্ন অনিচ্ছাকৃত ভুল। তিনি আরো জানান, অনেক সময় দেখা যায় একই বাড়ির বা পাশাপাশি বাড়ির ১০ জনের কার্ড একজনের বাড়িতে পৌছে দিয়ে আসছি সবাইকে দেয়ার জন্য। যার কাছে দিয়েছি সে কার্ডগুলো বিতরণ করে নাই এমনও হয়েছে। তিনি দাবী করেন, তিনি তার কাজ সম্পূর্ন স্বচ্ছতা ও সততার মাধ্যমে করেছেন।
পৌর মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, পৌরসভার ২৭ টি গ্রামে ৪২’শ কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কার্ড গুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও আওয়ামলীগ নেতৃবৃন্দের দেয়া তালিকা থেকে যাছাই বাছাই করে। সেখানে কাফুরা সদরদীতে কিছু অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি তদন্ত করতে প্যানেল মেয়র লিয়াকত মোল্যাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি সেখানে কাউন্সিলর বা পৌরসভার কারো গাফলতির প্রমান পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, আমাদের কাছে কয়েকটি জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আলফাডাঙ্গাতে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। ভাঙ্গার বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখা হবে। যদি জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি হয়ে থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, এখন থেকে ওএমএস এর কার্ডেও আমার কিউআর কোড বসিয়ে দেব, যাতে করে এক জনের কার্ড অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে। কোড বসানো হয়ে গেলে এই নিয়ে জালিয়াতি করার কোন সুযোগ থাকবে না।
এই বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, দেশের এই দুর্যোগ কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্তকর্তাসহ সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে সবাই। সেখানে দুর্যোগের মধ্যে কাড বিতরণে অনিয়ম খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। ভুক্তভোগীরা আমার কাছেও এসেছিল। প্রশাসন ও শংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে দাবী থাকবে বিষয়টি যেন অতিস্বত্বর খতিয়ে দেখা হয়, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হয় এবং বঞ্চিত দরিদ্রদের কার্ড বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়। #
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন