বিজয় পোদ্দার :ফরিদপুর: দহনের আগুনে শক্তি জ্বালো/প্রতিবন্ধকতার রাত্রী ভেঙে, এসো চেতনার বৃক্ষ রোপনে/মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মর্মবাণীতে ...........। একটি যুদ্ধ সংগ্রাম, আত্মত্যাগ মহান গৌরবে উজ্জীবীত কণ্ঠস্বরের জয় বাংলা। একটি শব্দমালায় গাঁথা জাতিসত্ত্বার প্রেরণা। পরাধীনতার শিঁকল ছিঁড়ে মুক্ত হবার সুখ-শান্তি এদেশে বাঙালী জাতির সেই সংকল্পের কবিতা, গান সেই ভাষা সাংস্কৃতির দীপ্ত সূর্যদয় জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার রাজনৈতিক শৈল্পিক কাঠামোতে অন্যরকম শক্তির রূপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যে সংগঠনের নেতৃত্বে এদেশের গণমানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম শানিত হয়েছিল তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৭৫’এর নৃশংস ট্রাজিডির পর এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা নৃশংসতা চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিভ্রান্ত করেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের উপর চলেছে হত্যা, নির্যাতন, নিপিড়ন। সেই বিশাদময় ইতিহাসের নিমর্মতায় এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে সেদিনের ট্রাজিডি থেকে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে বেঁচে যাওয়া জাতির পিতার দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা স্বদেশে ফিরে আসেন। নানা ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্রকে রোধ করে রাখা সেদিনের শকুনেরা শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। এদেশের মানুষের ভালোবাসা আর মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় তিনি বারবার প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। আজকের যে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রগতিতে হাঁটছে তার পিছনে একজন জননী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আদর্শ আর দেশাত্মবোধে শ্রম মর্মবাণী রয়েছে। সেই নেত্রীর রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে দুঃসময়ে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ-কে যারা সুসংগঠিত করেছেন তারা কোথায়। আজকের ফরিদপুরের রাজনৈতিক দূর্যোগে মাঠে দাঁড়াবার মতো নতুন নেতৃত্ব তেরী না হওয়ার পেছনে একের পর এক ষড়যন্ত্র ছিল। ফরিদপুরের মাটি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেওয়ায় ছিল যুদ্ধ অপরাধী পরিবারের সদস্যদের ষড়যন্ত্র। হালুয়া-রুটির একক দখল আধিপত্য, অবমূল্যায়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য আর বিশেষ বিশেষ বাহিনীর রক্ত চক্ষু আর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ব্যথিত ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের এখানে কর্ম তৎপরতায় ভয় তৈরী করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবারগুলোকে একের পর এক নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও ফরিদপুরের মাটি থেকে জয় বাংলার সেদিনের যোদ্ধারা আর তাদের রাজনৈতিক আদর্শে তৈরী হওয়া নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরাও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। ফরিদপুরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে সাহসী কণ্ঠকে রোধ করে দিতে হামলা করা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম ৫নং আসামী বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ বদিউজ্জামান বাবুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী-কে লক্ষ্য গুলি ছোড়া, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদারের নির্মম সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। বিভিন্ন সাহসী নেতৃবৃন্দের উপর হামলা-মামলা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ফরিদপুরের সাংবাদিকদের মধ্যেও হামলা চালানো হয়েছে। এদের মধ্যে তৎকালীন জনকণ্ঠের সাংবাদিক প্রবীর শিকদার-কে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হামলা করা হয়। প্রথম আলো থেকে সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান গৌতম দাস-কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হামলা মামলা করে ফরিদপুর থেকে বিতাড়িত করা হয় সাংবাদিক অশোকেশ রায় ও অমরেশ রায়কে। সাংবাদিক বেলাল চৌধুরীকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। কয়েকবার হামলা করা হয় বঙ্গবন্ধুর যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী পরিষদ সদস্য স্বর্গীয় গৌর চন্দ্র বালার পুত্র প্রথম আলো ফরিদপুরের প্রতিনিধি পান্না বালার উপর। হামলা করা হয় আমার উপর। দুই দফা এবং ফরিদপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক পেশী শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি বার বার। আজ চতুর্থ পর্বে ১৯৭২ সালের দিকে তৎকালীন ফরিদপুর ইয়াছিন কলেজের ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি ছিলেন সাবেক কোতয়ালী আওয়ামীলীগের সভাপতি খলিফা কামালউদ্দিন ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান ছিলেন জি.এস। ১৯৬৫ সালে ফরিদপুরে ইংরেজী সাইন বোর্ড বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ১৯৬৯ সালে ১১ দফা আন্দোলন আর মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক পথে হাটা শুরু করেন ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। তিনি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ও ১৯৭৮ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে নিউ ইয়র্কের রকেফেলার পোস্ট গ্রাজুয়েট ইউনিভার্সিটির রিসার্চ স্পেশালিষ্ট। রাজেন্দ্র কলেজের ১৯৭৯ তুখোর ছাত্রলীগ নেতা ও ভিপি মরহুম সামচুউদ্দিন মোল্যা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জেলা যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আজিজুল ইসলাম ফরিদপুরের সাহসী কণ্ঠস্বর ছিলেন। ১৯৯১ সালের বিএনপি সরকার আমলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক এ্যাডঃ অনিমেষ রায়, রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ভিপি, ছাত্রলীগের তুখোর নেতা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহবায়ক থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবিরাম সক্রিয় আছেন। তার কয়েক ভ্রাতা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ভিপি, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির দারুন সংগঠক ও বক্তা। নতুন প্রজন্মের মাঝে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক জি.এস. ও সাবেক থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৯১) ও বর্তমান যুবলীগ নেতা মোঃ রাসেদুজ্জামান রেসাদ সংগঠক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মত্যাগী কর্মী হিসেবে পরিচিত। রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ মনোনীত ভিপি প্রার্থী ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দেবাশীষ সরকার বাবু সাংগঠনিক কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রয়াত হয়েছেন সেই সময়ের তুখোর ছাত্রলীগের কণ্ঠস্বর রুকসুর সাবেক এজিএস (২০০০) বিশ্বজিৎ দাস গুপ্ত নাথু জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এটিএম জামিল তুহিন ইয়াছিন কলেজের সাবেক এজিএস (১৯৯৭), রুকসুর ক্রীড়া সম্পাদক (২০০০), সাবেক জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক, বর্তমান শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব রয়েছেন। এক সময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেটার। ফরিদপুরের আরও অনেক ইতিহাস রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আনার চেষ্টা করছি। কিছু কিছু অধ্যায় সংযোগ করার জন্য সবার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যারা সক্রিয় আর যারা অভিমানে আত্মকষ্টে সরে আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ আসু আবার মাঠে নামি। কোন ব্যক্তি বিশেষের ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃক্ষের ক্ষতি হোক অবশ্যই জয় বাংলার চেতনা কর্মীরা এটা চান না।
বি:দ্র: ফরিদপুর আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে যোদ্ধা ধারাবাহিকভাবে লিখবো। কারো কাছে কোন তথ্য, ছবি, ইতিবৃত্ত থাকলে দিয়ে সাহায্য করুন। অথবা মেইলে পাঠান: নরলড়ুভঢ়ঁৎ@মসধরষ.পড়স
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন