Halloween Costume ideas 2015

ফরিদপুরে পদ্মার চরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে জীবন মান



ফরিদপুর প্রতিনিধি :

ফরিদপুরে পদ্মার চরাঞ্চলকে এক সময় দূর্গম বিবেচনা করা হলেও বর্তমান সরকারের সময়ে ধারাবাহিক উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে সেই চিরচেনা চিত্র। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে  সড়ক ও সেতু নির্মাণ হওয়ায় চরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যাতায়াত সহজ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবী, চলমান দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চরবাসীর জীবন যাত্রায় উন্মোচিত হবে নতুন দুয়ার। আর স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, চরের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে টেকসই হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। 



ফরিদপুর সদর উপজেলা এলজিইডি অফিস সুত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল ও আলীয়াবাদ ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ২০১৮ সাল থেকে অদ্যবদি ৭৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ৮৫ কিলোমিটার এইচবিবি সড়ক ও ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩২ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মিত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে চারশ মিটারের ছোটো ও মাঝারি দৈর্ঘ্যরে ছয়টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আর চরকে জেলার মূল ভুখন্ডের সাথে সংযুক্ত করতে মরা পদ্মার উপরে ভাজনডাঙ্গা ঘাটে ৯৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ৫৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে কৃষি গার্ডার সেতু এবং শফির ঘাটে ৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩৪০ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। 

জানাগেছে, ফরিদপুর জেলা পদ্মা, আড়িয়াল খা ও মধুমতি নদী দ্বারা বেষ্টিত। বিশেষ করে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল ও আলীয়াবাদ ইউনিয়নের অন্তত ৮৫টি গ্রাম পদ্মানদীর চরাঞ্চলে অবস্থিত। এসব গ্রামে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। 

এসব চরের বাসিন্দাদের দাবী, জেলার মুল ভুখন্ডে তাদের যাতায়াতের বাহন শুধুমাত্র ইঞ্জিন চালিত নৌকা। আর চরাঞ্চলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে এক সময় ব্যবহৃত হতো ঘোড়ার গাড়ি। 



চরের ৩৮ দাগে বসবাসকারী লুৎফর রহমান, কাদের মাস্টারের ডাঙ্গী এলাকার মো. সেলিম জানান, এক সময় এসব চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ী ছাড়া আর কোনো বাহন ছিলো না। কোনো কোনো চর থেকে শহরে যেতে অন্তত ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগতো। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরগুলোতে এইচবিবি ও কার্পেটিং সড়ক নির্মাল ও সেতু দ্বারা সংযুক্ত হওয়ায় যাতায়াত অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। এখন যে কোনো চর থেকে দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাওয়া যায় শহরে। তারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করে মোটর সাইকেল, এসেছে বেশ কয়েকটি অটোগাড়ীও। যা ব্যবহার করে জরুরী ভিত্তিতে জেলা শহরে যাতায়াত করা যায়। সংরক্ষিত নারী সদস্য তছিরণ বক্কার জানান, সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় চারিদিকে বালুচর ছিলো, যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কোনো গর্ভবতী মা বোন অসুস্থ হলে তাকে শহরের হাসপাতালে নেয়া ছিলো কষ্টসাধ্য। এখন বেশ সহজেই মোটর সাইকেল বা অটোতে করে নেয়া যায়। 

স্থানীয় কৃষক, আব্বাস আলী, নজরুল প্রামাণিকসহ কয়েকজন জানান, চরে উৎপাদিত কৃষি পন্য স্থানান্তর নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হতো। তাই ন্যায্য মূল্যও পেতাম না। কিন্তু এখন মুহুর্তেই সড়ক ব্যবহার করে আমরা শহরে নিয়ে যাই।



নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের কবিরপুর চরের মো. নান্নু শেখ, মিন্টু, রহমান ব্যাপারী জানান, চরের অধিকাংশ মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস মুরগী পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু শহরে যখন গাভীর দুধ প্রতি কেজী ৭০ টাকায় বিক্রি হতো, তখন চরে বিক্রি হতো ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। কারণ শহরে নিতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগতো, এতে দুধ নষ্ট হয়ে যেতো। এছাড়া সংরক্ষনেরও কোনো সুযোগ ছিলোনা। কিন্তু এখন সড়ক হওয়ায় সহজেই শহরে নিয়ে বিক্রি করে আসা যায়। আবার শহর থেকে ব্যবসায়ীরাও এসে কিনে নিয়ে যায়। 

তিহাত্তর দাগের চরের বাসিন্দা কমেলা বেগম ও ৬৫ বছরের নবীরণ বেগম জানান, বিভিন্ন খালের উপরে সেতু হওয়ায় সহজেই তারা বিভিন্ন চরে যেতে পারেন। 

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন, ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিন্টু ফকিরসহ এসব চরের বাসিন্দারা মনে করেন, চরের এখোনো যে সকল এলাকায় সড়ক নির্মাণ করা হয়নি সেই সব এলাকায় সড়ক নির্মাণ করার পাশাপাশি ছোটো ছোটো খালগুলোর উপরে আরো সেতু নির্মাণ করে দেয়া হলে চরের মানুষের জীবন যাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। 

ফরিদপুর সদর উপজেলা এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী দেবাশীষ বাগচী জানান, চরের উন্নয়ন কাজ যাতে টেকসই হয় সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, চরকে মূল ভুখন্ডের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে ভাজনডাঙ্গায় ৫৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং শফির ঘাটে ৩৪০ মিটার সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে সচেষ্ট রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহ্সান তালুকদার জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে চরকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। চরের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ভাজন ডাঙ্গার সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মানুষ দ্রুততম সময়ে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান, এতে পরিবর্তন আসবে চরবাসীর জীবন মান ও অর্থনীতিতে। #


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

MKRdezign

{facebook#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {twitter#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {google-plus#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {pinterest#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {youtube#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {instagram#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL}

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget